ছোট বাচ্চারা তুলনামূলকভাবে সব থেকে বেশি অসুস্থ হওয়ার প্রধান কারণ হলো তাদের অপরিপক্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune System)।
শিশুরা জন্মের পর তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তাই তারা সহজেই বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণের শিকার হয়।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেওয়া হলো—
১. অপরিপক্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- নবজাতক ও ছোট শিশুর দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি, তাই তারা সহজেই সংক্রমিত হয়।
- মায়ের দুধে কিছু প্রতিরোধী উপাদান (Antibodies) থাকলেও, তা সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারে না।
২. নতুন নতুন জীবাণুর সংস্পর্শে আসা
- বাচ্চারা হাত-মুখে দিয়ে সবকিছু ধরতে ভালোবাসে, ফলে সহজেই জীবাণু তাদের শরীরে প্রবেশ করে।
- তারা খেলাধুলার সময় মাটি, খেলনা, বা অন্যান্য শিশুর সংস্পর্শে এসে জীবাণুর সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে।
৩. ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রতি বেশি সংবেদনশীল
- সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু, ডায়রিয়া, হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ ইত্যাদি রোগ ছোট শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- বাচ্চাদের শরীর ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বেশি সময় নেয়।
৪. ডে-কেয়ার বা স্কুলে যাওয়া
- যারা ডে-কেয়ার বা স্কুলে যায়, তারা অন্য শিশুদের থেকে জীবাণু সংগ্রহ করে সহজেই অসুস্থ হতে পারে।
- বাচ্চাদের হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে না, তাই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
৫. শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও টিকা নেওয়ার প্রভাব
- শিশুর শরীরে প্রথমবার বিভিন্ন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার অভিজ্ঞতা হয়, তাই তারা সহজেই অসুস্থ হয়।
- অনেক সময় টিকা নেওয়ার পরও কিছু শিশু সাময়িক জ্বর বা দুর্বলতা অনুভব করে।
৬. পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ঘুমের অভাব
- ভালো পুষ্টি ও পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, ফলে তারা সহজে অসুস্থ হয়।
কীভাবে শিশুকে সুরক্ষিত রাখা যায়?
✅ হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা – খাওয়ার আগে ও বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি।
✅ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা – খেলনা, শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা।
✅ সঠিক টিকা নিশ্চিত করা – সময়মতো শিশুকে প্রয়োজনীয় টিকা দেওয়া।
✅ সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা – ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো।
✅ পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম – পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই বেশি অসুস্থ হয়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই সচেতনতা ও পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের সুস্থ রাখা সম্ভব।